বিবি হাজেরা (আঃ)
![]() |
বিবি হাজেরা (আঃ) |
উভয় পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকা নিচু ছিল। যতক্ষণ সমভূমিতে চলিতেন, তখন চাতক পাখির ন্যায় অনিমেষ নেত্রে ছেলের দিলে দৃষ্টি ঘুরাইয়া ঘুরাইয়া দেখিতেন। কিন্তু নিম্নস্থানে অবতরণ করিলে ছেলেকে আর দেখা যাইত না। তাই তিনি ঐ স্থানটুকু বেগে দৌড়াইয়া অতিক্রম করিতেন। এইভাবে বিবি হাজেরা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া এক পাহাড় হইতে অন্য পাহাড়ে চড়িয়া কয়েকবার পানির সন্ধান করিলেন। বর্তমানে উভয় পাহাড়ের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি সমতল ভূমিতে পরিণত হইয়া গিয়াছে। বিবি হাজেরার এই দৌড়ানো আল্লাহ তা’আলার এত পছন্দনীয় হইল যে, তিনি হাজীদের জন্য উক্ত স্থানে সাতবার দৌড়ানো এবাদতে পরিণত করিয়া দিলেন।
অবশেষে বিবি হাজেরা মারওয়া পাহাড়ে চড়িয়া এক গায়েবী আওয়াজ শুনিতে পাইলেন। পুনরায় ঐ আওয়াজ অস্পষ্টভাবে শুনিতে পাইলেন কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না। তিনি বলিলেনঃ আমি আওয়াজ শুনিতে পাইতেছি, যদি কেহ এমন বিপদের সময় সাহায্য করিতে চায়, তবে আগাইয়া আসিতে পারে। তৎক্ষণাৎ বর্তমান যমযম কুয়ার জায়গায় ফেরেশতা দেখা গেল। ফেরেশতা তাঁহার বাজু মাটিতে আঘাত করায় পানি উথালাইয়া উঠিতে লাগিল। বিবি হাজেরা মাটির বাঁধে পানি আটকাইয়া ফেলিলেন। নিজে পানি পান করিলেন, ছেলেকে পান করাইলেন, মশক ভরিয়া পানি রাখিলেন। ফেরেশতা বলিলেনঃ আপনি চিন্তা করিবেন না। এখানে খোদার ঘর ‘খানায়ে কাবা’ রহিয়াছে। এই ছেলেই তাঁহার পিতার সহিত মিলিত হইয়া এই ঘরের মেরামত করিবেন। এই ভয়াবহ নির্জন মরু-ময়দান আবাদি জমিতে পরিণত হইবে। দেখিতে দেখিতে সকলই বাস্তবায়িত হইতে লাগিল। এক মরু কাফেলা পানির সন্ধান পাইয়া সেখানে বসতি স্থাপন করিল। যথাসময়ে ইসমাইল (আঃ) এর শাদী মোবারক সুসম্পন্ন হইল। আল্লাহ্র আদেশ পাইয়া হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সেখানে উপস্থিত হইলেন। পিতা-পুত্রের সাক্ষাত হইল। উভয়ে মিলিয়া খানায়ে কাবা নির্মান করিলেন। যমযমের পানি ঐ সময় বিস্তৃত হইয়া পড়ে। পরে তাহা কুয়ার আকার ধারণ করে।
বিবি হাজেরার বিশ্বাস ও ভরসা আল্লাহ্র উপর ছিল অপরিমেয়। তাই মরুময় ময়দানে অবস্থান করা, আল্লাহ্র হুকুম জানিতে পারিয়া তিনি একেবারে শান্ত ও নিশ্চিন্ত হইয়া পড়িয়া ছিলেন। অবশেষে এই ভরসার বদলে কত নেয়ামতই না জাহের হইল। তাঁহার মামুলী দৌড়াদৌড়িই হাজিদের জন্য ইবাদতে পরিণত হইয়া গেল। মকবুল বান্দার অতি সাধারণ কার্যগুলিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বলিয়া স্বীকৃত হয়। ইহার শত শত নযীর ইতিহাসে বিদ্যমান। অতএব, সর্বদা সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্মল আস্থা ও ভরসা রাখা চাই। [1]
তথ্যসূত্র: বেহেশতী জেওর
No comments