hedar

বিদায় পথে মাহে রমজানের !


বিদায় পথে মাহে রমজানের !
নারী অধিকার অান্দোলন একটি গতানুগতিক ও মুখরোচক বিষয় বটে। এর বাতাস প্রবাহিত হয় জোরে শোরেই। বক্তৃতা,সেমিনার,মানববন্ধন প্রভৃতি নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে,নারী অধিকারবাদীরা নারীদেরকে সমান অধিকার অাদায় করে দেওয়ার ব্যাপারে রেখে অাসছে জোরালো ভূমিকা। সেই অান্দোলনের ফলস্বরুপ চালু করা হয়েছে সহশিক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নারীদের শিক্ষাগ্রহণ করা হয়েছে অবৈতনিক। সাংবাদিকতা,শিক্ষকতাসহ সরকারি,বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের জন্য রাখা হয়েছে উল্লেখযোগ্য অানুপাতিক হার। অার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নাম করে,যে কোন কাজে নারীদের সম্পৃক্ততা এবং অবাধে বিচরণ করাকে দান করা হয়েছে বৈধতা। ফলে তাদের মানোন্নয়ন হয়েছে;তারা তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে রাখতে পারছে স্বত:স্ফুর্ত ভূমিকা। অপরদিকে ইসলামও নারীকে দিয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদা।সম্মান দিয়ে করেছে ধন্য। কিন্তু অাধুনিক নারীবাদীরা ইসলামকে এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। এখন অামাদের দেখানোর বিষয় হোলো এইযে, অাধুনিকতার ধ্বজাধারী ও ইসলামের মধ্যে,অালোচ্য বিষয়ের নীতিগত ও বুদ্ধবৃত্তিক অবস্থানটা কোন্ পর্যায়ের,তা নির্ণয় করা। এটা অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে,সৃষ্টিগত ভাবে নারী কমনীয়;যার প্রতি থাকে মানসিক ঝোক প্রবণতা। নারী রহস্যাবৃতা;তাই তাদের নিয়ে জাগে মানব মনে কৌতুহল। সেহেতু তাদের কান্তি,সৌন্দর্য-সৌষ্ঠবকে যথার্থ মর্যাদা দেওয়ার প্রতি ইসলাম করেছে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ।নারীর লাজুকতার প্রতি লক্ষ রেখে,তার মর্যাদার মানবন্টন ইসলাম এভাবে করেছে যে,বিবাহ পুর্ব তার স্বার্বিক ব্যয়ভার বহন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে পিতাকে।বিবাহোত্তর সমস্ত ব্যাপারাদি স্বামীর উপর ন্যাস্ত করেছে। স্বামীর অবর্তমানে স্বীয় সন্তান,তা না হলে উক্ত নারীর মর্যাদা,ইজ্জত অাব্রুর সংরক্ষণে সমাজ থাকবে দায়বদ্ধ। একথা সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য যে,পৃথিবীতে যতো রকমের ভোগের সরঞ্জাম রয়েছে,তন্মধ্যে নারী হচ্ছে প্রধাণতম। একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তি হোলো নারীর প্রতি অাকর্ষণবোধ এবং নারী সঙ্গ কামনা। ইসলাম তাই নারীরে থাকতে বলে অবগুণ্ঠিত। দেখুন -{সুরা নুর,অায়াত,২৬,৩১।তাফসীরে ত্ববারী,বায়যাবী,খাযেন}

অার বৈধ ও সুশৃংখলভাবে জৈবিক চাহিদা চরিতার্থ করণার্থে নির্দেশনা দেয় দাম্পত্য জীবনের।অার দাম্পত্য জীবনেও নারীর সর্বোত্তম মর্যাদার প্রতি ইসলাম লক্ষ রাখে। এ কারনে বিবাহে নারীকে মোহরানা প্রদান,পুরুষের জন্য অত্যাবশ্যক করে দিয়েছে। দেখুন -{সুরা নিসা„অায়াত,৪,৫}
তাদেরকে শাররীরিক,মানসিক কোনো প্রকার অত্যাচার,নির্যাতনে ইসলাম অারোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা। {তুহফাতুয যাওজাইন,মাঅারেফুল কুরঅান দ্রষ্টব্য}। বলা হয়েছে “তোমরা বিবাহের যাবতীয় ব্যয়ভার বহনে সক্ষম হলে বিবাহ করবে। অন্যথায় জৈবিক বাসনা দমনার্থে সিয়াম {রোযা} পালন করবে। কারন সিয়াম জৈবিক অাবেদনকে দমিয়ে রাখে। {অাল হাদীস,মিশকাতুল মাসাবীহ,কিতাবুন নিকাহ্}। মোটকথা,সামগ্রিকভাবে ইসলাম নারীকে দান করেছে উচ্চ মর্যাদা। অাজকের নারী অধিকারবাদীরা খামোখাই ইসলামকে দোষারোপ করে। ইসলাম নাকী নারী শিক্ষা সমর্থন করেনা! তাদেরকে ঘরে বন্ধী রেখে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করে ইত্যাদি। মূলত: দুটি কারনে তারা ইসলামকে প্রতিপক্ষ ও নারীবিরোধী মনে করে… ১।ইসলাম সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরও,শুধুমাত্র অবাধ ভোগবিলাসী জীবন যাপনের স্বার্থে তারা এরুপ মিথ্যাচারে রত হয় । ২।ইসলামী শিক্ষা,তাহযীব-তামাদ্দুন এর সাথে তারা চরম বিদ্বেষ ভাবাপন্ন। তাই তাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের প্রশ্নই উঠেনা। সেহেতু তারা করছে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। অপরদিকে ইসলাম নারী শিক্ষাকে করেনা অগ্রাহ্য;বরং উৎসাহিত করে।শিক্ষাকে নরনারীর জন্য বাধ্যতামূলক ঘোষণা দেয়।জ্ঞান সাধনায় নিমগ্ন থাকতে দেয় বিশেষ গুরুত্ব। উম্মুল মুমিনীন হযরত অায়েশা রাঃ একজন প্রসিদ্ধ,জ্ঞানী,বিচক্ষণ মহিলা ছিলেন। তাঁর ছিলো অসংখ্য ছাত্র-শিষ্য;যারা তার থেকে জ্ঞান পিপাসা নিবৃত করেছেন। ইসলামী ইতিহাসে এমন অসংখ্য নারী পাওয়া যাবে,যারা ছিলেন জ্ঞানে-গুণে বিশালত্বের অধিকারিনী। অতএব,ইসলাম নারী শিক্ষাকে সমর্থন করেনা মর্মে অপপ্রচার,কোনো ভাবেই পাবেনা গ্রহণযোগ্যতা।কারন এ দাবীর পিছনে নাই কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি। তবে কোন কোন প্রভাবশালী অতিশয় কট্টরবাদী ইসলামী ব্যক্তিত্ব কর্তৃক নারীদের শিক্ষার্জনে বাধা দানের বিষয়টি নারী বাদীরা প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে পারে।অবশ্য ইসলামের সামগ্রিক মহানুভব অাদর্শ ও ইতিহাসের মুকাবেলায়,এ ধরনের খন্ডিত ঘটনা দলীল হওয়ার যোগ্যতা পাবেনা। ,,,ইসলাম নারীদের কর্ম করতেও বাধা দেয়না। সদা-সর্বদা ঘরের অন্ধপ্রকোষ্ঠে অাটকিয়ে রাখেনা।ইসলামের সোনালী যুগে,বিভিন্ন সমরাভিযানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ,যুদ্ধাহতদের সেবাদান সংক্রান্ত ঘটনাবলী হতে পারে এক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরন। দেখুন-{,বুখারী,কিতাবুল মাগাযী,কাশফুল বারী শরহে বুখারী„ফতহুল বারী প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ}


তবে হালযামানার নারীবাদীদের মনোভাব অন্যরকম।তাদের কথা হোলো নারী থাকবেনা অবগুণ্ঠিত;বরং উম্মোচিত থাকবে। অার ইসলাম নারীর কর্ম,শিক্ষা সবকিছুরই স্বীকৃতি দেয়,কিন্তু তা হতে হবে অবগুণ্ঠিত হয়ে।কারন অাগেই বলা হয়েছে যে,নারীর প্রতি পুরুষের অাকর্ষণ সহজাত প্রবৃত্তি,উম্মোচিত হলেই বিশৃংখলা বেধে যাবে। তাই সুস্থ সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণে,নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা সংরক্ষণের স্বার্থে,অবশ্যই তাকে হতে হবে পর্দাবৃতা…! অাধুনিক নারীবাদীদের মোহনীয় দর্শন বাস্তবায়ণের পথে অগ্রসর হওয়ার দরুণ সমাজ অাজ অধ:পতনের দ্বারপ্রান্তে। সম্প্রতি দেশের ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হিজাব পরার অপরাধে! বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার। এতে করে তার সাংবিধানিক প্রদত্ত্ব স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এবং এর দ্বারা মূলত তাদের অধিকারের ন্যায্যতার পরিবর্তে,নগ্ন ভোগবাদী মানসিকতাই প্রতীয়মান হয়েছে। বেপর্দাবস্থায় সহশিক্ষার ফলই যে,ধর্ষণ,গণধর্ষণ,মাদকাসক্তি , ইভটিজিং,নারী নির্যাতন,প্রভৃতি সমাজ বিধ্বংসী বিশৃংখলা, তা অার বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই অাধুনিক নারী অধিকার,নারী স্বাধীনতার অজুহাতেই পতিতাবৃত্তিকে দেওয়া হয়েছে বৈধতা। অথচ তাদেরকে উত্তম দাম্পত্ত জীবন গ্রহণে সহযোগিতা ও উৎসাহ দেওয়া ছিলো সমাজ-রাষ্ট্রের একটা নৈতিক দায়িত্ব, এবং তাতে করে তাদের মর্যাদা ও অধিকার হতো সংরক্ষিত। স্বাধীনতার সুবাদেই,ফ্যাশন শো গুলোর মূল অাকর্ষণ হচ্ছে ম্যাকাপধারী অর্ধনগ্ন নারী। সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীকে পণ্য বানিয়ে,রমরমা ব্যবসা করা কি নারী অধিকার প্রদান? অাধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম ও নৈতিক পাঠের অপ্রতুলতার বিষক্রিয়া হচ্ছে অজস্র প্রেমিক-যুগল! অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের অবাধ সুযোগ…! ফলশ্রুতি,পারিবারিক দ্বন্দ-কলহ,অবশেষে {অনেক ক্ষেত্রে} বুকের সাথে বুক মিলিয়ে,জোড়া মানিকের একসঙ্গে অাত্মাহুতি…! এ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া প্রেয়সীর অমলিন-শুভ্র অবয়ব…! অাধুনিক নারী স্বাধীনতার অাশীর্বাদ হচ্ছে মা-বাবাকে হত্যাকারী ঐশী নাম্নী মূল্যবান! সম্পদ…! এসব ঐ নারীবাদীরা করতে পারেনা উপলব্ধি। গম বুনে যেমন ধানের অাশা করা অযৌক্তিক,তদ্রুপ নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে,মাঠে,ঘাটে,বন্দরে,অবগুণ্ঠনমুক্ত অবস্থায় কাজ করাটাও অযৌক্তিক। বরং এটা নারী অধিকারের চরম অবমাননা। কারন অাগেই বলা হয়েছে,নারী লাজুক,তদুপরি সম্মানী।তাদের খরচের যোগান দিতে যথাক্রমে বাবা,স্বামী,সন্তান সর্বোপরি সমাজ দায়বদ্ধ। লক্ষ লক্ষ নারী যৌতুক নামক বিষধর সাঁপের দংশনে ক্ষত-বিক্ষত। স্বামীর পাষন্ডতার শিকার হয়ে,তিলে তিলে জীবনটা নি:শেষ করে দিচ্ছে,নিভৃতে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে দিয়ে। যৌতুকবিরোধী অাইন খাতায়ই রয়ে গেছে। যৌতুকবিরোধী শ্লোগানের মুখরোচক বাক্যগুলো মুখ থেকে নিসৃত হয়ে বাকহীন বাতাসে মিশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে নারীবাদীদের নজর যায়না। বস্তুত: একমাত্র ইসলামই দিতে পারে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা।পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞানের সমাহার ঘটলেও যদি না থাকে সেখানে ধর্মের উপস্থিতি,তাহলে অাদৌ সুস্থ সমাজ গঠন সম্ভব হবেনা। অবশেষে বলা যায়, নারীকে সম্মান,অধিকার দিতেই হবে। তবে সে সম্মান দিতে গিয়ে,অযৌক্তিক কথামালা বিন্যস্ত করে ভোগবাদী মানসিকতাকে বৈধতা দেওয়ার অপকৌশল গোপন থাকার নয়।

No comments

Theme images by tjasam. Powered by Blogger.