hedar

স্মার্টকার্ড ছাপানো বন্ধ


প্রথম ধাপে নয় কোটি নাগরিককে ডিসেম্বরের মধ্যে স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও বিতরণ হয়েছে মাত্র তিন ভাগ। এর অন্যতম কারণ নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ডের সরবরাহ না পাওয়া। ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে চুক্তি করার সময় ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুর টেকনোলজিস জানিয়েছিল, গত ৩০ জুনের মধ্যেই সব স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে দেবে। অথচ এখন পর্যন্ত তা এসেছে মাত্র ৬৫ ভাগ, তাও আবার ব্ল্যাংক। এর মধ্যে প্রিন্ট হয়েছে মাত্র ১৩ ভাগ কার্ড। তাদের হয়ে সাব-কন্ট্রাক্টে প্রিন্টিংয়ের কাজ করছে এ দেশেরই একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অবার্থুর সঙ্গে দেশি প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কের টানাপড়েনে বর্তমানে কার্ড ছাপানোই বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ওদের (দুই কোম্পানি) মধ্যে কী ঝামেলা আছে, সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। সময়মতো ওরা সব কার্ড কেন দেয়নি সেটির ব্যাখ্যা দিতে হবে। তার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে কার্ড মুদ্রণ বন্ধ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, ওরা (অবার্থুর টেকনোলজিস) এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ ভাগ কার্ড পারসনালাইজেশন করেছে। তাই টার্মস অব কন্ডিশন না মানলে ওদের সঙ্গে কাজ করতে হবে এমন নয়। আমরা বিদেশিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকব না। দেশেই কার্ড উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করে সাইদুল ইসলাম বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিতরণের অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে। তা ছাড়া ফ্রান্স থেকে ব্ল্যাংককার্ড দেশে আসার পর ব্যবহার উপযোগী করার জন্য পারসনালাইজেশন করতে হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে গত ৩০ জুনের মধ্যে নয় কোটি স্মার্টকার্ড দেওয়ার কথা। এ জন্য কোম্পানিটি বাংলাদেশে ১০টি মেশিন পাঠিয়েছে, কাজের সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে টাইগার আইটি নামে এদেশের একটি কোম্পানিকে। সক্ষমতা অনুসারে প্রতিদিন একেকটি মেশিনে ১৮ হাজার কার্ড প্রিন্ট হওয়ার কথা। সেই হিসাবে ১০টি মেশিনে দিনে কার্ড প্রস্তুত হওয়ার কথা এক লাখ ৮০ হাজার। আর স্মার্টকার্ড বিরতণ শুরু হয় গত ৩ অক্টোবর। তখন থেকে প্রিন্ট চলমান থাকলে এই ১০ মাসে পাঁচ কোটি কার্ড তৈরি হতো, যা পুরো কাজের প্রায় ৬০ শতাংশ; কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ১৩ ভাগ কার্ড প্রিন্ট করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই কোম্পানির মধ্যে ঝামেলা হওয়ায় প্রিন্টিং কাজ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ইসি সূত্র জানায়, সব কার্ড না দিয়েই চুক্তিকৃত অর্থ চায় অবার্থু। এ লক্ষ্যে তারা বেশ তদবির-তৎপরতা চালালেও বর্তমান এনআইডির ডিজি ও ইসির কঠোরতায় সফল হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আরও সাতটি মেশিন বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে ফ্রান্সের কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে তারা কমিশনের কাছে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইবে বলে জানা গেছে। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নয় কোটি কার্ড বিতরণ স্বপ্নই থেকে যাবে।

এদিকে গত ১৭ এপ্রিল স্মার্টকার্ড নিয়ে মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছিলেন, চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স থেকে নয় কোটি ব্ল্যাংককার্ড আসার কথা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসেছে পাঁচ কোটি ২০ লাখ। আমাদের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বাকি কার্ড দিতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা কার্ড দেবে বলে লিখিতও দিয়েছে। ফ্রান্সের ওই প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কার্ড দিতে ব্যর্থ হলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন এনআইডি মহাপরিচালক।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে অবার্থুর টেকনোলজিসের সঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ইসি। তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল নয় কোটি কার্ডের। দফায় দফায় পিছিয়ে সেই কার্ড বিতরণ শুরু হয় ২০১৬ সালে। আর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্ড বিতরণের কাজ শুরু করার কথা ছিল ২০১৪ সালের শেষের দিকে; কিন্তু যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ইসি। এ কারণে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে। বর্তমানে বিভাগীয় শহরে বিতরণ করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নয় কোটি নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে বর্তমানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১০ কোটি ১৮ লাখ। নয় কোটির জন্য স্মার্টকার্ডের চুক্তি হলেও বাকিদের দেশীয় ব্যবস্থাপনায় স্মার্টকার্ড দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করছে ইসি।

নিজস্ব প্রতিবেদক /হাসান মাহমুদ ফারাবি
আলিম ২য় বর্ষ, জে.এম. ফাজিল মাদরাসা

No comments

Theme images by tjasam. Powered by Blogger.