হযরত সারা [আ.]
বিবি সারা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর স্ত্রী এবং হযরত ইসহাক (আঃ) এর মাতা। ফেরেশতাগণ হযরত সারাকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিয়াছেন, “আপনি আপনার পরিবার-পরিজনের জন্য আল্লাহ তা’আলার রহমত স্বরূপ।” তাঁহার ঐশীপ্রেম ও দোয়া কবুল হওয়ার কথা কোরআন মজীদে বর্নিত হইয়াছে।
হাদিস শরীফে আছে—একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শামদেশে হিজরত করিতেছিলেন। বিবি সারা ছিলেন তাঁহার সঙ্গিনী। তাঁহারা পথ চলিতে চলিতে এক জালেম বাদশাহের রাজ্যে আসিয়া পৌছিলেন। এক নাদান গোপনে বাদশাহ্কে জানাইল যে, আপনার রাজ্যে এক সুন্দরী রমণী আগমন করিয়াছে। বাদশাহের নিয়ম ছিল এই যে, যে মহিলাকে তাহারা অপহরণ করিত, তাহার সঙ্গী পুরুষ লোকটি যদি স্বামী হইতো, তবে তাহাকে হত্যা করিয়া মহিলাকে নিয়া যাইত। ঘটনাচক্রে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে রাজ দরবারে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করা হইলঃ তোমার সঙ্গী রমণীটি কে ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হেকমত খাটাইলেন। উত্তরে তিনি বলিলেন সে আমার ভগ্নী। ( নিঃসন্দেহে সারা (আঃ) ইব্রাহিম (আঃ) এর দ্বীনী ভগ্নী ছিলেন)। বাদশাহের সম্মুখ হইতে চলিয়া আসিয়া ইব্রাহীম (আঃ) বিবি সারাকে বলিলেনঃ দেখো, তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিও না। যেহেতু দ্বীনী সম্পর্কে তুমি আমার ভগ্নীই হও। ইহার পর বাদশাহ বিবি সারাকে ডাকিয়া পাঠাইল। তিনি বাদশাহের দরবারে হাজির হইলেন এবং বুঝিতে পারিলেন যে, বাদশাহের মতলব মোটেও ভাল নয়। তাই তিনি ওযু করিয়া নামাজ পড়িলেন এবং দোয়ার জন্য দরবারে এলাহিতে হাত উঠাইলেন। প্রার্থনা জানাইলেন, আয় আল্লাহ ! হে পরওয়ারদেগার বেনিয়ায ! সত্য সত্যি যদি তোমার প্রেরিত পয়গম্বরের উপর বিশ্বাসী হইয়া থাকি, ঈমান আনিয়া থাকি এবং অদ্যাবধি আমার সতীত্বকে বজায় রাখিয়া থাকি, তবে এই জালেম বাদশাহ্কে আমার উপর গালেব করিয়া দিও না। দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গেই জালেম বাদশাহের হাত, পা, এমনকি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পঙ্গু হইয়া পড়িল যে, অত্যাচার জুলুম তো দুরের কথা, সে ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া কাকুতি মিনতি করিতে লাগিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁহার অবস্থা মৃতপ্রায় হইয়া উঠিল। বিবি সারা ভাবিলেন, এমতাবস্থায় যদি বাদশাহ্ মারা যায়, তবে জনগণ অবশ্যই বলিবে যে, এই রমণীই বাদশাহের হত্যাকারিণী। তাই তিনি (সারা (আঃ)) বাদশাহের নিমিত্ত নেক (খায়েরের) দোয়া করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হইয়া গেল। পুনরায় বাদশাহের মাথায় বদ খেয়াল চাপিল। বাধ্য হইয়া বিবি সারা আবার বদদোয়া করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার পূর্বাবস্থাই ঘটিল। এইবার বাদশাহ্ কঠোর প্রতিজ্ঞা করিয়া খুব কান্নাকাটি করিতে লাগিল। বিবি সারার দয়ার দরিয়ায় বান ডাকিল। তিনি দোয়া করিলেন, বাদশাহ্ ভাল হইয়া গেল। এইরূপে বাদশাহ্ তিনবার প্রতিজ্ঞা করিয়া প্রতিবারই তাহা ভঙ্গ করিল। অবশেষে বাদশাহ্ বলিয়া ফেলিল—আপনি এখানে কি মুছিবত নিয়া আসিয়াছেন, আপনি দয়া করিয়া এখান হইতে বিদায় হউন। বাদশাহ্ পূর্বাহ্নেই বিবি হাজেরাকে বাদী বানাইয়া রাখিয়াছিল। এবার তাহাকে খেদমতের নিমিত্ত বিবি সারার হাওলা করিয়া দিল। বিবি হাজেরার ইজ্জত আবরু আল্লাহ তা’আলা হেফাজত করিয়া রাখিয়াছিলেন।
উপরোক্ত কাহিনী হইতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, নামাজের পরের দোয়া কবুল হইয়া থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিৎ কোন মুছিবতে লিপ্ত হইয়া পড়িলে খাঁটি দেলে তওবা করিয়া নামাজ আদায় করিয়া দোয়ায় মশগুল হওয়া। [1]
তথ্যসূত্র:
বেহেশতী জেওর
হাদিস শরীফে আছে—একদা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শামদেশে হিজরত করিতেছিলেন। বিবি সারা ছিলেন তাঁহার সঙ্গিনী। তাঁহারা পথ চলিতে চলিতে এক জালেম বাদশাহের রাজ্যে আসিয়া পৌছিলেন। এক নাদান গোপনে বাদশাহ্কে জানাইল যে, আপনার রাজ্যে এক সুন্দরী রমণী আগমন করিয়াছে। বাদশাহের নিয়ম ছিল এই যে, যে মহিলাকে তাহারা অপহরণ করিত, তাহার সঙ্গী পুরুষ লোকটি যদি স্বামী হইতো, তবে তাহাকে হত্যা করিয়া মহিলাকে নিয়া যাইত। ঘটনাচক্রে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে রাজ দরবারে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করা হইলঃ তোমার সঙ্গী রমণীটি কে ? হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হেকমত খাটাইলেন। উত্তরে তিনি বলিলেন সে আমার ভগ্নী। ( নিঃসন্দেহে সারা (আঃ) ইব্রাহিম (আঃ) এর দ্বীনী ভগ্নী ছিলেন)। বাদশাহের সম্মুখ হইতে চলিয়া আসিয়া ইব্রাহীম (আঃ) বিবি সারাকে বলিলেনঃ দেখো, তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিও না। যেহেতু দ্বীনী সম্পর্কে তুমি আমার ভগ্নীই হও। ইহার পর বাদশাহ বিবি সারাকে ডাকিয়া পাঠাইল। তিনি বাদশাহের দরবারে হাজির হইলেন এবং বুঝিতে পারিলেন যে, বাদশাহের মতলব মোটেও ভাল নয়। তাই তিনি ওযু করিয়া নামাজ পড়িলেন এবং দোয়ার জন্য দরবারে এলাহিতে হাত উঠাইলেন। প্রার্থনা জানাইলেন, আয় আল্লাহ ! হে পরওয়ারদেগার বেনিয়ায ! সত্য সত্যি যদি তোমার প্রেরিত পয়গম্বরের উপর বিশ্বাসী হইয়া থাকি, ঈমান আনিয়া থাকি এবং অদ্যাবধি আমার সতীত্বকে বজায় রাখিয়া থাকি, তবে এই জালেম বাদশাহ্কে আমার উপর গালেব করিয়া দিও না। দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গেই জালেম বাদশাহের হাত, পা, এমনকি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পঙ্গু হইয়া পড়িল যে, অত্যাচার জুলুম তো দুরের কথা, সে ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া কাকুতি মিনতি করিতে লাগিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁহার অবস্থা মৃতপ্রায় হইয়া উঠিল। বিবি সারা ভাবিলেন, এমতাবস্থায় যদি বাদশাহ্ মারা যায়, তবে জনগণ অবশ্যই বলিবে যে, এই রমণীই বাদশাহের হত্যাকারিণী। তাই তিনি (সারা (আঃ)) বাদশাহের নিমিত্ত নেক (খায়েরের) দোয়া করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হইয়া গেল। পুনরায় বাদশাহের মাথায় বদ খেয়াল চাপিল। বাধ্য হইয়া বিবি সারা আবার বদদোয়া করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার পূর্বাবস্থাই ঘটিল। এইবার বাদশাহ্ কঠোর প্রতিজ্ঞা করিয়া খুব কান্নাকাটি করিতে লাগিল। বিবি সারার দয়ার দরিয়ায় বান ডাকিল। তিনি দোয়া করিলেন, বাদশাহ্ ভাল হইয়া গেল। এইরূপে বাদশাহ্ তিনবার প্রতিজ্ঞা করিয়া প্রতিবারই তাহা ভঙ্গ করিল। অবশেষে বাদশাহ্ বলিয়া ফেলিল—আপনি এখানে কি মুছিবত নিয়া আসিয়াছেন, আপনি দয়া করিয়া এখান হইতে বিদায় হউন। বাদশাহ্ পূর্বাহ্নেই বিবি হাজেরাকে বাদী বানাইয়া রাখিয়াছিল। এবার তাহাকে খেদমতের নিমিত্ত বিবি সারার হাওলা করিয়া দিল। বিবি হাজেরার ইজ্জত আবরু আল্লাহ তা’আলা হেফাজত করিয়া রাখিয়াছিলেন।
উপরোক্ত কাহিনী হইতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, নামাজের পরের দোয়া কবুল হইয়া থাকে। তাই প্রত্যেকের উচিৎ কোন মুছিবতে লিপ্ত হইয়া পড়িলে খাঁটি দেলে তওবা করিয়া নামাজ আদায় করিয়া দোয়ায় মশগুল হওয়া। [1]
তথ্যসূত্র:
বেহেশতী জেওর
No comments