বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভুমিকম্পঃ
হাফিজুর রহমান নোমান :
ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হটাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (ঊধৎঃযয়ঁধশব) বলে। কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের যে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং উৎসস্থল থেকে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারনত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক/দু-মিনিট স্থায়ী হয়। (উইকিপিডিয়া)
আমাদের পৃথিবীর উপরিভাগের, বাংলাদেশে যেমন পলিমাটি, কিছু নীচে গেলে পাথর পাওয়া যায়। পাথরের স্তর কত নীচে, সেটা স্থানভেদে কম- বেশি হয়। যেমন ঢাকা শহরে ১০ কিলোমিটার নীচে গেলে পাথর পাওয়া যাবে। আবার উত্তর বঙ্গের মধ্যপাড়া বা সিলেটে সামান্য নীচেই পাথর পাওয়া যায়। ভূগর্ভস্থ পাথরের স্তর ৭০-৮০ কিলোমিটার পুরু। এর মধ্যে কিছু ফাটল রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ফল্ট বা চ্যুতি।
আবার গোটা পৃথিবী কিন্তু পাথরের অখ- স্তরে মোড়ানো নয়। কয়েক দশক আগে আমরা জেনেছি এগুলো বেশ কিছু খন্ডে বিভক্ত। এগুলোকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। উল্লেখযোগ্য প্লেটের সংখ্যা ১২টা। পাথরের স্তরের নীচে রয়েছে না কঠিন না তরল উত্তপ্ত বস্তু। এগুলোতে যে শক্তি সঞ্চিত হয়, সেটা প্লেটের সংযোগস্থল বা চ্যুতি দিয়ে অবমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। তখন ভূমিকম্প হয়। প্লেটগুলো খুব ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে। তখনও ভূমিকম্প দেখা দেয়। প্লেটের সংযোগস্থলগুলো সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ। শতকরা ৯০ ভাগ ভূমিকম্প হয় সেখানে। যেসব চ্যুতি সক্রিয় সেখানেও ভূমিকম্প দেখা যায়। (মানবজমিন )
সাধারণ বিজ্ঞানের বইগুলোতে ভূমিকম্পের ৫টি কারণ দেখানো হয়েছে:
১. কোন কারণে পাহাড় ও পর্বত থেকে বৃহৎ শিলাখ- ভূত্বকের ওপর ধসে পড়লে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২. কোন কারণে পৃথিবীর অভ্যন্তরে বড় রকমের শিলাচ্যুতি হলে বা শিলাতে ভাঁজে সৃষ্টি হলে ভূমিকম্প হয়।
৩. তাপ বিকিরণের ফলে ভূগর্ভ সংকুচিত হলে ভূগর্ভস্থ শিলাস্তরে ভারের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে যে পরিবর্তন ঘটে, তাতে ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে।
৪. ভূগর্ভে সঞ্চিত বাষ্পের চাপ অধিক হলে তা ভূত্বকের নিম্বভাগে ধাক্কা দেয় ফলে ভূমিকম্প হয়।
৫. এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ চাপের হ্রাস, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ওপরের প্রবল চাপ, গুহার ভাঙন, খনির ভাঙন, হিমবাহের প্রভাব ও ভূ-অভ্যন্তরে ভূপৃষ্ঠের পানি প্রবেশ প্রভৃতি কারণেও ভূমিকম্প হয়।
এতো গেল ভূমিকম্প সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী। বিজ্ঞান এভাবেই ভূমিকম্পের কারণ ব্যাখ্যা করে। বলা বহুল্য প্রতিটি স্থূল কারণের অন্তরালে থাকে সূক্ষ্মকারণ। বস্তুবাদীদের স্থূল নজর শুধু স্থূল কারণের অনুসন্ধানে তৎপর থাকে। এর বাইরে তারা অন্য কিছু দেখে না এবং দেখতে চায়ও না, অতএব, স্বীকার করার প্রশ্নও আসে না।
সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লায় বিশ্বাসী একজন মুমিন কখনো স্থূল কারণের মাঝে আবর্তিত থাকতে পারেনা। তাকে খুঁজে দেখতে হয় এসব স্থূল কার্যকারণের আড়ালে অর্ন্তনিহিত কারণ কী? বস্তুবাদের স্থূলতায় ভুলে যায় না সুক্ষ কারণ।
লেখক : কলামিস্ট, গবেষক
আজিজ উল্লাহ আহমদী
No comments