hedar

দরিদ্রেদের সাহায্য আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম!

                                                            এসএম আরিফুল কাদের
শাহ কিরমানী ছিলেন খোদাবক্ত বুযুর্গ। এককালে তিনি ছিলেন বিরাট সাম্রাজ্যের অধিকারী। তারপর একসময় ধীরে ধীরে দুনিয়ার মোহ তাঁর মন থেকে উঠে যায়। ঝুঁকে পড়েন বাদশাহী ছেড়ে ফকিরীতে। ডুকে যান আল্লাহর ইবাদতে। আল্লাহর প্রতি ছিল তাঁর প্রবল ভরসা। তাই যখন যা পেতেন তা-ই গরীব দুঃখীর মাঝে বিলিয়ে দিতেন অকাতরে। কিছুই জমা করে রাখতেন না। ভবিষ্যতের ব্যাপারে তাঁর ছিল সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা। তাঁর ছিল এক মেয়ে। অত্যন্ত নেককার। গরীব ও অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সব সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়াতো সে। মেয়েটির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো। এমনকি বাদশাহের পক্ষ থেকেও বিয়ের প্রস্তাব এলো। কিন্তু শাহ কিরমানী সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তার মেয়ের বিয়ে দিলেন এক দরিদ্র যুবকের সাথে। যুবকটি ছিল অত্যন্ত সৎ। নামাজ-রোজার পাবন্দ। শাহ কিরমানীর মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ী পৌছে দেখে, ঘরে গতরাতের বাসি রুটি পড়ে আছে। তিনি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ‘এটা কি?’ ‘এগুলো গতরাতের বাসি রুটি।’ স্বামী বললেন। আগামীকালের জন্য রেখে দিয়েছি। ‘তাহলে সেরেছে। এ বাড়ীতে আমার বসবাস মুশকিল হবে দেখছি।’ শাহ কিরমানীর মেয়ে বিরক্তির স্বরে বললেন। স্বামী বললেনঃ আমিতো আগেই বুঝেছিলাম। গরীবের ঘরে শাহজাদী-এ কি শোভা পায়? ‘না, আসলে কিন্তু ব্যপারটা তা নয় যা আপনি ভেবেছেন।’ স্ত্রী তাকে বুঝাবার চেষ্টা করেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি অত্যন্ত উদার ও দয়ালু। গরীবের বন্ধু। ক্ষুধার্ত-নাঙ্গা মানুষের খোঁজ-খবর রাখেন। কিন্তু এখন দেখছি আপনি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। স্বামী তাঁর কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। তিনি তাঁর মুখের দিকে শুধুই নীরবে তাকিয়ে রইলেন। স্ত্রী আবার বলতে লাগলেনঃ এই বাসি রুটি আপনি আগামীকালের জন্য জমিয়ে রেখেছেন। অথচ আজ রাতে হয়ত কত দরিদ্র-অসহায় মানুষ অনাহারে-আর্ধাহারে রাত কাটিয়ে দেবে। আহ! এ রুটিগুলো যদি তারা পেতো তবে আমাদের কত সওয়াব হতো। আল্লাহ খুশি হয়ে আমাদের রিয্ক আরো বাড়িয়ে দিতেন। আপনি গরীব দুঃখীর কথা চিন্তা না করে সব নিজের জন্য রেখে দিয়েছেন। এমন ব্যক্তির সাথে কেমন করে ঘর-সংসার করবো? স্ত্রীর কথা শুনে যুবক স্বামী অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তাঁর দিকে। মনে মনে লজ্জিত হলেন তিনি। বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ সব রুটি নিয়ে গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
লেখকঃ নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা(প্রাইভেট), পানাহার, জয়কা, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

No comments

Theme images by tjasam. Powered by Blogger.